Header Ads

১৯৫৬ সালের পাকিস্তান সংবিধানের প্রধান বৈশিষ্ট্য

 

১৯৫৬ সালের পাকিস্তান সংবিধানের প্রধান বৈশিষ্ট্য 



পাকিস্তান সৃষ্টির দীর্ঘ দশ বছর পর ১৯৫৬ সালের ২৯ ফেব্রুয়ারি দ্বিতীয় গণপরিষদ কর্তৃক পাকিস্তানের প্রথম সংবিধানের খসড়া গৃহীত হয়। এই সংবিধান ১৯৫৬ সালের ২৩ মার্চ থেকে তা কার্যকর হয়। ১৯৫৬ সালের পাকিস্তান সংবিধানের বৈশিষ্ট্য নিম্নরূপ :

১. ইসলামী প্রজাতন্ত্র : ১৯৫৬ সালের সংবিধানে পাকিস্তানকে একটি 'ইসলামী প্রজাতন্ত্র' বলে আখ্যায়িত করা হয়। পবিত্র কুরআন ও সুন্নাহর পরিপন্থী কোন আইন প্রণীত হবে না বলে উল্লেখ করা হয়। ইসলামী সমাজব্যবস্থা গঠনের উদ্দেশ্যে ইসলামী গবেষণাগার ও ইসলামী উপদেষ্টা কাউন্সিল গঠনের ব্যবস্থা করা হয়। সংবিধানে উল্লেখ করা হয় যে, পাকিস্তানের রাষ্ট্রপ্রধান হবেন একজন মুসলমান।

২. লিখিত সংবিধান : ১৯৫৬ সালের পাকিস্তান সংবিধান ছিল পৃথিবীর বৃহত্তম লিখিত সংবিধান। ১০৫ পৃষ্ঠায় এই সংবিধানে একটি প্রস্তাবনা, ১৩টি অংশ, ৬টি তালিকা ও ২৩৪টি ধারা সন্নিবেশিত ছিল।

৩. দুষ্পরিবর্তনীয় সংবিধানঃ এই সংবিধান ছিল দুষ্পরিবর্তনীয়। জাতীয় পরিষদের সাধারণ সংখ্যাগরিষ্ঠের দ্বারা সংশোধনী বিল উত্থাপন করা গেলেও তা পাস করতে দুই-তৃতীয়াংশ ভোটের প্রয়োজন হত।

৪. প্রতিনিধিত্বমূলক গণতন্ত্র: ১৯৫৬ সালের সংবিধান অনুযায়ী সর্বজনীন ভোটাধিকার নীতির ভিত্তিতে জাতি-ধর্ম বর্ণ, নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সকল প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিকের ভোটে সরকার গঠিত হত।

৫. যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার: এই সংবিধানে যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হয়। সংবিধান কর্তৃক ক্ষমতা বণ্টননীতি, যুক্তরাষ্ট্রীয় আনাগত এবং প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসনের মতো যুক্তরাষ্ট্রীয় বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান ছিল।

৬. সংসদীয় সরকার : এই সংবিধান কেন্দ্র ও প্রদেশে সংসদীয় পদ্ধতির সরকার প্রবর্তন করে আইনসভার সংখ্যাগরিষ্ঠ দল মন্ত্রিসভা গঠন করত এবং তাদের কাজের জন্য আইনসভার নিকট দায়ী থাকত।

৭. মৌলিক অধিকার: সংবিধানে নাগরিকদের মৌলিক অধিকারসমূহ সন্নিবেশিত হয়। মৌলিক অধিকারগুলোকে আদালতের আওতাভুক্ত করা হয়, তবে জরুরি অবস্থা চলাকালে রাষ্ট্রপতি মৌলিক অধিকার রহিত করতে পারতেন।

৮. রাষ্ট্রীয় নীতি-নির্দেশক নীতি: আয়ারল্যান্ড, ভারত প্রভৃতি দেশের ন্যায় এই সংবিধানে কতগুলো 'রাষ্ট্রীয় নীতি নির্দেশক নীতি' বা আদর্শ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল।

৯. এককক্ষবিশিষ্ট আইনসভা : এই সংবিধানে যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হলেও রাষ্ট্রীয় ঐক্য ও সংহতি রক্ষার জন্য কেন্দ্র ও প্রদেশে এককক্ষবিশিষ্ট আইনসভা গঠনের ব্যবস্থা করা হয়।

১০. যুক্তরাষ্ট্রীয় আদালত : কেন্দ্র ও প্রদেশের মধ্যে সম্ভাব্য বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য একটি যুক্তরাষ্ট্রীয় আদালত গঠন করা হয়। সংবিধানের ব্যাখ্যা প্রদান এবং সংসদীয় যেকোন আইনকে সংবিধানসম্মত নয় বলে ঘোষণা করার ক্ষমতা এই আদালতে প্রদান করা হয়।

১১. বিচার বিভাগের স্বাধীনতা : এই সংবিধানে আইন ও শাসন বিভাগের নিয়ন্ত্রণ ও হস্তক্ষেপ থেকে বিচার বিভাগকে পৃথক রাখা হয় এবং বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার কথা বলা হয়।

১২. সংখ্যালঘুদের স্বার্থ সংরক্ষণের ব্যবস্থা : এই সংবিধানে সংখ্যালঘুদের স্বার্থ সংরক্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা বা পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়।

No comments

Powered by Blogger.