সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী জানিয়েছেন, অভ্র তৈরিতে আরও যাদের ভূমিকা রয়েছে তাদের ছাড়া পুরস্কার নিতে চাননি মেহেদী হাসান খান। সে কারণে অভ্রর জন্য চার গুণীকেই সম্মানিত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানান এই উপদেষ্টা। রবিবার (৯ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডিতে এক পোস্টে তিনি এসব তথ্য জানান।
এদিকে, একুশে পদক পাওয়ার অভিব্যক্তি প্রকাশ করেছেন অভ্র অভ্র কিবোর্ডের আবিষ্কারক মেহেদী হাসান খান। রবিবার (৯ ফেব্রুয়ারি) ‘Avro Keyboard - Bangla Software’ নামের ফেসবুক পেজে এক স্ট্যাটাস দিয়ে অভ্র টিমের পক্ষ থেকে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন তিনি।
মেহেদী হাসান খান লিখেছেন, ইচ্ছা বা অনিচ্ছায় একটু পরিচিতি পেয়ে যাওয়ার সুবিধা-অসুবিধা দুইটাই আছে। বিড়ম্বনার কথা আজকে না বলি। সুবিধার একটা হলো প্রয়োজনে ডাকলে সাথে থাকার মানুষ পাওয়া যায়। পরিচিতি পাওয়ার আগে এরকম সাথে থাকার মানুষ পাওয়া কঠিন, কাজের মানুষ পাওয়া আরও কঠিন।
তিনি আরও লিখেছেন ২০০৩ সালে যখন অভ্রর কাজ শুরু করলাম, তখন অভ্র বা আমাকে কেউই চিনত না। একটা ফোরাম বানালাম মানুষের টেকনিক্যাল সমস্যার সমাধান দেয়ার জন্য। ইউনিকোডের ব্যবহার তখনও নতুন, হাজারটা সমস্যা। ধীরে ধীরে মানুষ জমতে শুরু করল অনলাইন ফোরামে, তারা সমস্যা নিয়ে আসেন, আমি সমাধান বের করার চেষ্টা করি, অথবা bug থাকলে ঠিক করে নতুন রিলিজ দেই। কিছু মানুষ, আমি যাদের চিনি না, তারাও আমাকে চিনে না, এরা শুধু সমস্যা নিয়ে আসার বদলে ধীরে ধীরে বাকিদের সমস্যা সমাধানে আমার সাথে যোগ দেয়া শুরু করল। একসময় অনলাইন ফোরামের বাইরে তাদের সাথে দেখা করলাম। সবাই ছাত্র তখন আমরা। কোন কারণে অভ্রর মিশনটায় তারা বিশ্বাস করেছে, এর বাইরে আর কোন চাওয়া পাওয়া নাই তাদের।
তিনি লিখেছেন, ফোরাম থেকে শুরু হয়ে বাংলা ফন্ট বানানো, সফটওয়্যার বানানো, সবকিছু একসাথে করলাম আমরা। বিভিন্ন সময়ে এরকম অবদান রাখা অনেকে এসেছেন, চলেও গিয়েছেন নানা কারণে, কিন্তু কোন কারণে হাতে গোনা কয়েকজন লেগে থাকলাম আমরা বছর দশকের উপর। স্বার্থহীন এমন মানুষজন একসাথে ছিল দেখে স্বার্থপর লোকজন চেষ্টা করেও আমাদের আটকাতে পারে নাই।
তিনি বলেন, আমি সবাইকে খুশি করতে পারবো না। কিন্তু দলের কাজের কৃতিত্ব একক ব্যক্তি না পাক, আমার সামর্থ্য দিয়ে এটুকু চেষ্টা করতে পারি। একুশে পদক ঘোষণার পরে অ্যাডভাইজার ফারুকী ভাইয়ের সাথে যোগাযোগ হলো। ওনাকে ব্যাপারটা বোঝাতে খুব বেশি চেষ্টা করতে হয় নাই, সেজন্য আমি কৃতজ্ঞ। ২০০৩ সাল থেকে অনেকে অভ্র কাজে সাহায্য করেছেন, এদের সবার অবদান আছে। কিন্তু শুরু থেকে একদম শেষ পর্যন্ত আমরা যারা একসাথে কাজ করেছি, রিফাত, সিয়াম, শাবাব, এদের ছাড়া আমি অভ্রর নামে একুশে পদক গ্রহণ করতে পারব না। উনি মেনে নিয়েছেন, বাকিদেরও রাজি করিয়েছেন। ওনাদের কথা ছিল, পদক গ্রহণ করা বা না করার কথা পরে, রাষ্ট্রের কাজ জানানো যে আপনাদের কাজের জন্য রাষ্ট্র কৃতজ্ঞ, তারা তাই করেছেন। আমিও মেনে নিয়েছি। পরের প্রজন্মের জন্য অভ্রর মিশনটা যদি রেখে যেতে হয়, সাথে আমাদের টিমওয়ার্কটাও উদাহরণ হিসেবে থাকুক। একা একা তো বেশিদূর যাওয়া যায় না।
তিনি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে আরও লিখেছেন, ভালো হলো শেষমেশ। ওনারা বাংলাদেশ নারী ফুটবল দলকেও পদক দিচ্ছেন। দলকে স্বীকৃতি দেয়ার এই সংস্কৃতি চালু থাকুক। অভ্রর জন্য একুশে পদকের দাবি নিয়ে অনেকে অনেক বছর ধরে অনলাইনে ক্যাম্পেইন করছেন, আপনাদের দাবি পূরণ হলো।
إرسال تعليق
Thanks for your Comment.